জ্বালানী শূন্য স্বদেশঃ ক্ষমো হে দেশ, ক্ষমো মোদের – নূর নবী দুলাল

Posted: জুলাই 21, 2011 in ব্লগ

আওয়ামী সরকার কর্তৃক দেশ বিক্রির একটি পদক্ষেপ ছিল, গত ১৬ই জুন সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের বেনিয়া প্রতিষ্ঠান কনোকো-ফিলিপস’র সাথে পিএসসি নামক চুক্তির মাধ্যমে বাঙালীকে দাসত্বের শৃঙ্খল পরানোর নব্য কাসিমবাজার কুঠিরের গোপন প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। যে চুক্তির মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগণকে ভবিষ্যতে এক চরম জ্বালানী দূর্ভিক্ষের মুখোমুখি করে দিয়েছে ডিজিটাল নামধারী ফুলবানুর সরকার। আমাদের এই ছোট্ট সমুদ্রসীমার যেই অংশটুক (ভারত ও মিয়ানামারের সাথে বিরোধপূর্ণ অংশ ব্যতিত) ভবিষ্যত জ্বালানীর সংকট মিটানোর মত ব্যবস্থা ছিল, তা এখন আমাদের নেই। বাংলার নব্য রায়দূর্লভ, জগতশেঠ, মীরকাসিম, রাজভল্লব ও ঘষেটি বেগমরা মিলে মীরজাফরের প্র্রেতাত্মায় ভর করে হাসিনা বিবি ওরফে ফুলবানু বিদেশী প্রভুর পূঁজার ভোগ দিয়ে দিয়েছেন। ১১ ও ১২ এই দুই সেক্টরে ভাগ করা আমাদের সমুদ্রের সীমার মালিক এখন আমরা নই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, আমাদের আগামী ৫০ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানী সংকট মেটানো যেত সমুদ্রের তলদেশের এই প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। এখন এগুলোর মালিক যুক্তরাষ্ট্র বা তার মনোনীত এজেন্ট কনোকো-ফিলিপস। এটা ভাবতেই আমার খুব কষ্ট হয়। ঐ সমুদ্রের কোন মালিকানা আর আমাদের নেই। আপনাদের কি কষ্ট হয় না? চোখের সম্মুখ দিয়ে এতবড় লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের বোধের দরজায় একবারও কি হুহু করা আর্তনাদ শুনতে পান না?

আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের উদুরপূর্তির জন্য বাংলাদেশের সকল নাগরিকের এই সম্পদ নব্য ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছে আজীবনের জন্য বিক্রি করে দিল। একবারও কি আপনাদের জানতে ইচ্ছে করেনা কি সম্পদ লুকিয়ে আছে সমুদ্রের ঐ তলদেশে? যা জানাতে সরকার ইচ্ছুক নয়। সতের কোটি জনগনের এই দেশে সতের লক্ষ্য মানুষেরও কি আগ্রহ নেই জানতে সরকারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে? সতের হাজার জনগণেরও কি ইচ্ছে করেনা আমাদের এই সম্পদ লুন্ঠনের প্রতিবাদ জানাতে? হায় সেলুকাস! আমরা কি এতই অথর্ব জাতি হয়ে গেলাম। আমার এখন বিশ্বাস করতে লজ্জ্বা লাগে, এই আমরাই বৃটিশদের তাড়িয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই আমরাই এক হুঙ্কারে আমাদের রাষ্ট্র ভাষার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। লাটি-সোটা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর এক হুঙ্কারে মাত্র নয়মাসে একটি সসস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম দিয়েছিলাম। ধিক্‌ আমাদের জাতিয়তার প্রতি। ধিক্‌ সংগ্রাম মুখর প্রতিবাদী বাঙালীর ঐতিহ্যর প্রতি।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, সরকারের সাথে কনোকো-ফিলিপসের ষড়যন্ত্রের এই চুক্তিতে আসলেই কি আছে। তেল-গ্যাস-সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার এই চুক্তিটির বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে এত অনীহা দেখাচ্ছে কেন? গত কিছুদিনের জাতীয় কমিটির এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন সত্বেও সরকারের নির্লিপ্ত ভূমিকা অবাক করার মত। পাশাপাশি খালেদা-এরশাদ-জামায়তসহ বামদলগুলিও সরাসরি মুখে কুলুপ এটে আছে। মিডিয়গুলোও কানে তুলো দিয়েছে, চোখে কালো চশমা দিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে? চুক্তি না দেখেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আলোচিত এই চুক্তিকে ‘যৌক্তিক’ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এটিকে ‘দূরদর্শী’ ও ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়েছে। কি এত মুল্যবান সম্পদ বাংলাদেশের ছোট্ট সমুদ্রের তলদেশে আছে? যা লুন্ঠন করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী এই বেনিয়া কোম্পানী সবাইকে কিনে নিয়েছে? চিন্তা করছি, কত শত শত কোটি টাকা বিতরণ করলে এতগুলো মুখ বন্ধ রাখা যায়? আসুন আমাদের এই সমুদ্রের তলদেশকে স্বল্প কিছু তথ্যের আলোকে ব্যবচ্ছেদ করি।

আমরা জানি, একটি দেশের কোন পণ্য যখন সে দেশের জনগোষ্ঠির পরিপূর্ণভাবে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত না থাকে, তখন সে পণ্যটিকে রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্য হিসাবে রপ্তানীনীতিমালা করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ জ্বালানী ক্ষেত্রে আমদানী নির্ভর দেশ হিসাবে পরিচিত। সঙ্গত কারণে, বাংলাদেশের রপ্তানীনীতিতে যে কোন ধরণের জ্বালানী পণ্য রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্য হিসাবেই পরিগণিত হয়ে আসছে এবং রপ্তানীনীতিতে যে কোন ধরণের জ্বালানী পণ্য রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্যর তালিকায় অর্ন্তভূক্ত ছিল। কিন্তু, সরকার কনোকো-ফিলিপস’র সাথে যে পিএসসি-২০০৮ (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট, উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) নামের চুক্তিটি করছেন, এতে রপ্তানীর সুবিধা প্রদান করেই চুক্তিটির সম্পদনা করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চুক্তির প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় থেকে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত চুক্তির কোন বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা যাবে না!

কিন্তু কেন? কি আছে ঐ চুক্তিতে? যা দেশের মানুষ জানলে চুক্তি সম্পাদনকারীদের সমস্যা হবে? তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী দেশের নাগরিকের সকল বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আছে। শুধুমাত্র দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সরকার জনসম্মুখে প্রকাশ করবেনা। জনস্বার্থে করা এই চুক্তিটি কোনভাবেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সমরনীতিতে পড়েনা বলেই স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক রাষ্ট্রের জনগণ। সে হিসাবে সরকার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সেবক বই আর কিছুই নই। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধিগণ জনকল্যানে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকান্ড পরিচালনা ও জনগণের কল্যানময় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহন করবেন মাত্র। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারের গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের জনগণকে সরকার জানাতে বাধ্য। জনগণের চাহিবামাত্র সরকার গৃহীত যে কোন সিদ্ধান্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা সরকারের নৈতিক ও সাংবিধানিক দ্ধায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাহলে কনোকো-ফিলিপস’র সাথে সরকারের এই চুক্তিটি নিয়ে জনগণের সাথে লুকোচুরি খেলার কি অর্থ হতে পারে? এতে সরকার কি তথ্য অধিকার আইন লঙ্গন করে জনগণকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন না? অথবা সরকার নিজেই সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর খুশীর জন্য দেশের জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন না?

যে দেশটি বর্তমানে প্রচন্ড এক জ্বালানী সংকটের মধ্যে পতিত, সেদেশের সরকার কনোকো-ফিলিপস’র সাথে রপ্তানীমুখী এই জ্বালানী চুক্তিটি কিভাবে করে? আমরা স্পষ্টভাবে সরকার থেকে জানতে চাই?

এখন আসুন জেনে নেই এই চুক্তির উদ্দেশ্য কি? জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সমুদ্রের দুটি ব্লকের ওপর মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। শুধু তাই নয়, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদের ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার দখলস্বত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো। শুরু হলো সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের নতুন এক অধ্যায়ের। দু’শ বছরের বৃটিশ আধিপত্যের পর এখন শুরু হল সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য। এক গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তি পেয়েও যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। নতুন গোলামীর জোয়াল আমাদের ফুলবাণুর সরকার আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিল। বাঙালীর জন্মই কি হয়েছে আমৃত্য গোলামীর জোয়াল কাঁধে বহন করার জন্য?

কি আছে এই চুক্তিতে? কি পাব আমরা? চুক্তিতে আছে সব কিছু ছিনিয়ের নেওয়ার আরব্য রজনীর সেই দানবীয় কাহিনী। চুক্তির মহা মারপ্যাচে আমরা কিছুই পাব না। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে সব হাঁসি মুখে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সাম্রাজ্যবাদী দালালেরা। চুক্তির ১৫.৫.৪ ধারায় আছে, ‘বাংলাদেশ যদি সমুদ্রের ১৭৫ মাইল দূরের গ্যাসক্ষেত্র পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা (পাইপ লাইন) স্থাপন করে, তাহলেই কেবল বাংলাদেশের পক্ষে পেট্রোবাংলা তার অংশের লভ্যাংশ গ্যাস রাখার অধিকার পাবে, তবে তা কোনোমতেই মোট প্রাপ্ত গ্যাসের ২০ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু এই ২০ শতাংশ গ্যাস যদি আমাদের পেতে হয়, তবে ১৭৫ মাইল পাইপলাইন আমাদেরকেই বসাতে হবে। উত্তাল এই সমুদ্রে পাইপ লাইন বসানো চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু পাইপলাইন বসালেই কাজ হবে না। উত্তাল এই সমুদ্রের পানি শাসন, সামুদ্রিক ঝড় থেকে এই পাইপলাইনের সুরক্ষার জন্য যে স্টিলের সার্পোট বসাতে হবে তার খরচও বিশাল অংকের। সমুদ্রের গ্যাস ক্ষেত্র থকে স্থলভাগ পর্যন্ত এই পাইপলাই টানতে খরচ পড়বে কনোকো-ফিলিপস এর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রায় ৩/৪ গুন বেশী। বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, এর চেয়ে অনেক কম খরচে মায়ানমার থেকে স্থল পথে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানী করা অনেক সহজসাধ্য ব্যাপার। অথবা বর্তমানের জ্বালানী সংকট মিটানোর জন্য বিদেশ থেকে তরলাকৃতির গ্যাস আমদানী করাও অনেক সহজসাধ্য ব্যাপার।

এদিকে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান, বাপেক্স আবিষ্কৃত দেশের স্থলভাগের সম্ভাব্য বৃহত্তম ‘সুনেত্র’ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য সংস্থা মাত্র ২৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। এই গ্যাস ক্ষেত্রে প্রচুর গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে। অথচ সরকার এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। আর সমুদ্রের গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সব ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য সরকারের তৎপরতা অবশ্যই সন্দেহজনক।

চুক্তির ১৫.৫.১, ১৫.৫.৪, ১৫.৫.৫ ও ১৫.৬ ধারায় বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে এবং ১৫.৫.২ ধারায় বর্ণিত হিসাব অনুসারে কনোকো-ফিলিপস চুক্তিকৃত এলাকায় উৎপাদিত যে কোনো পরিমাণ বিপণনযোগ্য গ্যাস বাংলাদেশের অংশসহ এলএনজি বা তরলায়িত করে রপ্তানির অধিকার পাবে। আবার কনোকো-ফিলিপস বাংলাদেশকে গ্যাস কেনার আহবান জানাবে, কিন্তু তা গ্যাস আকারে দেবে, তরলায়িত করে নয়। সেটি অবশ্যই বাংলাদেশ কর্তৃক স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অংশের ২০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশকে তার ক্রয়কৃত বা প্রাপ্ত নিজস্ব হিস্যার গ্যাস কনোকো-ফিলিপস-এর পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়ার দায়দায়িত্বের বিষয়টি চুক্তিতে নেই। তাই সমুদ্র পৃষ্টের ঐ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে এক তোলা গ্যাস পাওয়ার আদৌ কোন সম্ভবনা নেই।

চুক্তির ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, পাইপ লাইন নির্মাণের অধিকার কনোকো-ফিলিপসের থাকবে। কিন্তু সেই পাইপলাইনের গ্যাস কনোকো-ফিলিপস থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্য (অবশ্যই উচ্চ মূল্যে) অনুযায়ী বাংলাদেশকে কিনে নিতে হবে। যেখানে বাপেক্সসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম প্রতি হাজার ঘনফুট ২৫ টাকা। সেই একই গ্যাস চুক্তি অনুযায়ী কনোকো-ফিলিপস থেকে পেট্রোবাংলা তা ভর্তুকি দিয়ে কিনতে হবে প্রতি ঘনফুট সাড়ে তিন ডলার বা ২১০ থেকে ২৫০ টাকায় এবং এই বহুজাতিক কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্সও পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতে হবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী পেট্রোবাংলা কনোকো-ফিলিপস থেকে বিদেশী মুদ্রায় নিজের দেশের এই গ্যাস কিনতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এতে চাপ পড়বে বিদেশী রিজার্ভের উপর। যাকে বলে নিজভুমে পরবাসী। উৎপাদন অনুযায়ী যদি বাংলাদেশ/পেট্রোবাংলা গ্যাস ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা ঐ গ্যাস তরলাকৃত অবস্থায় বিদেশে রপ্তানী করবে। তবে কোন ক্রমেই তরলাকৃত গ্যাস থেকে বাংলাদেশ কোন অংশই পাবেনা বা ক্রয় করতেও পারবেনা। সবচয়ে বড় কথা হচ্ছে, চুক্তিতে অতি কৌশলে পেট্রোলিয়ামজাত বিষয়টিও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ সমুদ্রপৃষ্টের এই ব্লকদুটিতে গ্যাস পরবর্তী তেল প্রাপ্তির বিষয়টি কনোকো-ফিলিপস শতভাগ নিশ্চিত হয়েই এই চুক্তিটি সম্পদান করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এই তেলের হিস্যা আমাদের কতটুক আছে বা আমরা কতটুকু পাব তা অনুমান করলেই বুঝতে পারবেন।

এদিকে পিএসসি ২০০৮-এর ১০.২৭ ধারাতে অদক্ষতার কারণে বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের যে বিধান ছিল, তা সংশোধন করে আমাদের ফুলবানু কনোকো-ফিলিপসকে রেহাই দিয়েছেন। অর্থাৎ, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার দায় থেকেও এই বহুজাতিক সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হলো। আর কনোকো-ফিলিপস যে দূর্ঘটনার মহারাজা তা আমার পূর্বোক্ত এক লেখায় বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম।

আমরা এখনো বিস্মৃত হইনি মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল-ইউনিকলের সাথে সম্পাদিত সেই কালো চুক্তির কথা। আমরাতো এখনো ভুলে যাইনি অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও ত্রুটির কারণে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়ায় ব্লো-আউটের কথা। ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো সরকারই বিগত ১৪ বছরে মাগুরছড়ার গ্যাসসম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি। অক্সিডেন্টাল-ইউনোকলের সাথে কালো চুক্তির পক্ষে যারা শোরগোল তুলেছিলেন, তারাই এই কনোকা-ফিলিপসের সাথে চুক্তি প্রণয়নে মূল ভূমিকা রেখেছেন।

সতের কোটি মানুষের এই দেশে সরকারের ৪০/৫০ জন মন্ত্রী-উপদেষ্টার কাছে আমরা কি জিম্মি হয়ে থাকব? আমাদের ৫০ বছরের জ্বালানীকে আমরা এভাবে নিরবে লুট হয়ে যেতে দেব? আমরা কি আসলেই এত বড় নপংসুক জাতি?

যদি আমরা চুপ করেই থাকার মানসিকতা নিয়েই থাকি, তবে আসুন আমরা এখন থেকেই আদিম যুগে ধাবিত হওয়ার চর্চায় মত্ত হই। আমাদের শস্যদানাগুলোকে পনিতে ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টায় মত্ত হই। এখন থেকেই গরুর গাড়ীতে চলার জন্য অভ্যস্থ হয়ে উঠি। পাথরে ঘর্ষনের মাধ্যমে আগুন জ্বালানোতে নিজেদের রপ্ত করে তুলি। সন্ধ্যার পরে এখনই আমরা অন্ধকারে রাত্রিযাপনে নিজেদের অভ্যস্থ করে তুলি। গাছের বাকল পরে নতুন ফ্যাশনের যাত্রা শুরু করি। নিজেদেরকে কাঁচা মাছ-মাংশ ভক্ষনে উপযুক্ত করে তুলি।

আমাদের পিঠকে নীলচাষীদের মত নির্যাতন সইবার উপযুক্ততা করে গড়ে তুলি।

অবাক বাংলাদেশ। তোমার বুকে আবার শুকুনীদের আগমন ঘটেছে। ক্ষমা করো হে দেশ আমাদের। আমাদের হাতগুলো আর বজ্রমুষ্টি হয় না। আমাদের কন্ঠগুলো প্রতিবাদের ভাষায় আর রিনিঝিনি করে না। আমাদের রক্তগুলো সাদা হয়ে গেছে। ক্ষমো হে দেশ, ক্ষমো মোদের। ক্ষমো মাতৃভূমি, ক্ষমো মোদের!!!!

মূল লিংকঃ http://bit.ly/pvhLra

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান