প্রেস

সমুদ্র বক্ষের তেল-গ্যাস চুক্তি বাতিলের দাবিতে সাস্টিয়ান টোকাইদের প্রতিবাদ

১৩ই জুলাই, বুধবার বিকেল ৫টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমুদ্র বক্ষের তেল-গ্যাস চুক্তি বাতিলের দাবিতে ‘সাস্টিয়ান টোকাই সমাজ’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপি চলা এই কর্মসূচীর মাঝে ছিল কার্টুন প্রদর্শনী, সংগীত পরিবেশন, পুথি পাঠ এবং মুক্ত আলোচনা। বিকেল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরু হতে বিলম্ব হয় এবং এর ফলে সময়সল্পতা জনিত কারণে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তিকাল কমিয়ে আনা হয়। দেশপ্রেমে উদবুদ্ধ ও জাতীয় স্বার্থে সচেতন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মত। ধীরে ধীরে সাস্টিয়ান টোকাই সমাজের এই অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়। উপস্থিত সবাই একসাথে কন্ঠ মিলিয়ে বিভিন্ন দেশাত্ববোধক ও চুক্তি বিরোধী ব্যাঙ্গাত্বক গান গাওয়ার মধ্যদিয়ে যে কোন দেশ ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পুথি পাঠ ছিল অনুষ্ঠানের আরেকটি আকর্ষণীয় অংশ। বিভিন্ন পরিবেশনার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীরা গ্যাস চুক্তি নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে এবং এ সম্পর্কে তাদের ভাবনা প্রকাশ ও চুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকগণ এই কর্মসূচীতে শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের একাত্বতা প্রকাশ করেন এবং অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মুক্ত আলোচনায় শিক্ষকদের মধ্যে ড. মু. জাফর ইকবাল, শহীদুল ইসলাম, মোঃ রুহুল আমিন, জহির উদ্দিন আহমেদ, মোঃ মাসুদ আলম অংশগ্রহণ করেন এবং কার্টুন প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক মো. আবু নাসের বিকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষকরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই সচেতনতাকে সাধুবাদ জানান এবং দেশের যেকোন জাতীর স্বার্থে কাজ করে যাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করেন। ড. মু. জাফর ইকবাল বলেন, “স্বার্থান্বেষী মহল সবসময় মানুষের ক্ষতির কথা চেপে রাখে। কিন্তু মানুষ যখন নিজের ক্ষতির কথাগুলো জেনে যায় তখন সেই খারাপ লোকগুলো আর কিছু করতে পারেনা। একমুখী শিক্ষা, ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে আনা সহ আরো অনেক ভুল সিদ্ধান্ত তথ্য প্রবাহের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস চুক্তির ব্যাপারেও এটি নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানুষ এই চুক্তির খারাপ দিকগুলো জানতে পারে।” সাস্টিয়ান টোকাই সমাজের পক্ষে তাদের আহবায়ক তানভীর হোসেন খান শুভ জানান, “সাস্টিয়ান টোকাই সমাজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম। এটি তার সম্পূর্ণরুপে অরাজনৈতিক ও অসাম্প্রদায়িক অবস্থান বজায় রেখে দেশের যে কোন জাতীয় স্বার্থ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করে যাবে।” টোকাই নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “গ্যাস চুক্তির বিরুদ্ধে, দেশের স্বার্থে কাজ করে যাওয়া জনগণকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ‘টোকাই’ বলে গালমন্দ করেন এবং তাদের নীচু, বর্ণবাদী মানসিকতা প্রকাশ করেন। আমরা সেই টোকাই সম্বোধন মাথায় তুলে নিয়েছি। এছাড়াও, ৬৯’র গণঅভূত্থানের একটি মিছিলের সময় আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা সমগ্র আবেগ দিয়ে, চোখ ও মুখের ভাষা দিয়ে, পুরো শরীর দিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী একজন টোকাইয়ের বিখ্যাত সেই ফটোগ্রাফের টোকাইটি আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এছাড়াও কার্টুনিস্ট রনবী’র সৃষ্টি বাংলাদেশের অন্যতম স্বনামধন্য একটি কার্টুন চরিত্র ‘টোকাই’ এর সচেতন ও স্পষ্টভাষী ব্যক্তিত্ব আমাদের এই টোকাই নামকরণে উৎসাহ প্রদান করে। এই টোকাই সমাজের প্রত্যেকে একেকজন গর্বিত টোকাই। প্রতিটি টোকাই দেশের যে কোন জাতীয় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সচেতন।” নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলে টোকাইরা তাদের এই কর্মকান্ড সকলের সহযোগিতায় আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করে।

১৩-৭-২০১১, বুধবার

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান