হে মহান দেশপ্রেমের কাঙ্গাল,আপনাকে বলছি-
একটু শুনুন;জানি বৃথা চেচিয়ে
সময়ের অপচয় করছি…
এই আশায় দু’একটি শব্দ হয়তো আপনার কর্ণকুহরে ঢুকবে…
‘হয়তো’!!!

আপনি দেশখ্যাত দেশপ্রেমিক
তলাভাঙ্গাকুম্ভ,মহানুভবতার
কপালপোড়া এই জাতির
তিনশতেত্রিশতম অবতার…
(সত্যি করে বলতে বাচালতার শিরমণি…) Read the rest of this entry »

অনেকদিন ধরে ব্লগ লিখি না। অনেকটা আলস্যের চাঁদরে মনে হয় নিজেকে আবৃত করে ফেলেছি। কিছুটা সত্যি। কিন্তু পুরোপুরি না। যা নিয়ে আমার মধ্যে উদ্বেগের ঝড় উঠে, সেই বিষয়ে আমার সহ-যোদ্ধা ব্লগাররা বরাবরের মতই যুদ্ধে মেতে আছে। তাই জারী এই অনলাইনের যুদ্ধ উপভোগ করে নিজেকে প্রশান্তির মেঘে ভাসিয়ে বেড়াচ্ছি। ব্লগে গত কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছি, হাসিনার সরকার কর্তৃক আমাদের তেল-গ্যাস নিয়ে যে রাষ্ট্রীয় ডাকাতী হয়ে গেল, সে বিষয়ে আলোচনা কম হচ্ছে। এর কারণ, জ্বালানী সম্পদের ব্যবস্থাপনা, উত্তোলন, সাপ্লাই-ডিমান্ড ইত্যাদি কারিগরি বিষয়াদি জড়িত থাকার কারনে এ সম্পর্কে আমাদের কম জানা। পৃথিবীর সব দেশের জনগনই জ্বালানী এবং খনিজ সম্পদ নিয়ে একটু কমই জানে। আর এ সুযোগেই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট কোম্পানীগুলো খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ দেশগুলোর দূনীর্তিপরায়ন সরকারের সাথে আঁতাত করে খনিজ সম্পদ লুণ্ঠন করে নেয়।

গত ১৬ই জুন কনোকো ফিলিপস নামের একটি এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের ফুলবানু সরকার আপোষ-রফায় এক হতে পেরেছেন। দেশের তেল-সম্পদ নিয়ে যারা টুকটাক কথা বলছে, তারা একে নব্য ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানী হিসাবে দেখছেন। এই চৌর্যবৃত্তি প্রকাশ হওয়ার ভয়ে সরকার চুক্তির ব্যাপারে একেবারেই মুখ খুলছেন না। আমরা সাধারণ জনগণ অজ্ঞতার কারণে সরকারের এই কাশিমবাজার কুঠির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে হয়তঃ কিছুই জানতাম না। কিন্তু আনু-মানু নামের কিছু টোকাইয়ের সরকারের চুরির দলিল পিএসসি নিয়ে অযথা ঘাটাঘাটির কারণে আমরা বোকামানুষগুলো চুক্তির অনেক কিছুই জেনে গেছি। ফুলবানু এই টোকাইগুলোকে লোক দেখানো পাত্তা না দিলেও জানে এরা ফুলবাড়ি থেকে কিভাবে এশিয়া এনার্জিকে তাড়িয়েছিল। তাইতো চুক্তির দিন সুশীল এই টোকাইদের মাথা ফাঁটিয়ে রক্তের লাল দিয়ে চুক্তির এই তামাশাকে রঙ্গিন করেছিল। টোকাইদের এই রক্ত দেখে সাধারণ মানুষের ক্রোধ চাঙিয়ে উঠল। টোকাইরা সাহস করে ঢাকায় একটা ছয় ঘন্টার হরতাল করে ফেলল। Read the rest of this entry »

আওয়ামী সরকার কর্তৃক দেশ বিক্রির একটি পদক্ষেপ ছিল, গত ১৬ই জুন সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের বেনিয়া প্রতিষ্ঠান কনোকো-ফিলিপস’র সাথে পিএসসি নামক চুক্তির মাধ্যমে বাঙালীকে দাসত্বের শৃঙ্খল পরানোর নব্য কাসিমবাজার কুঠিরের গোপন প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। যে চুক্তির মাধ্যমে আমাদের দেশের জনগণকে ভবিষ্যতে এক চরম জ্বালানী দূর্ভিক্ষের মুখোমুখি করে দিয়েছে ডিজিটাল নামধারী ফুলবানুর সরকার। আমাদের এই ছোট্ট সমুদ্রসীমার যেই অংশটুক (ভারত ও মিয়ানামারের সাথে বিরোধপূর্ণ অংশ ব্যতিত) ভবিষ্যত জ্বালানীর সংকট মিটানোর মত ব্যবস্থা ছিল, তা এখন আমাদের নেই। বাংলার নব্য রায়দূর্লভ, জগতশেঠ, মীরকাসিম, রাজভল্লব ও ঘষেটি বেগমরা মিলে মীরজাফরের প্র্রেতাত্মায় ভর করে হাসিনা বিবি ওরফে ফুলবানু বিদেশী প্রভুর পূঁজার ভোগ দিয়ে দিয়েছেন। ১১ ও ১২ এই দুই সেক্টরে ভাগ করা আমাদের সমুদ্রের সীমার মালিক এখন আমরা নই। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, আমাদের আগামী ৫০ বছরের নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস ভিত্তিক জ্বালানী সংকট মেটানো যেত সমুদ্রের তলদেশের এই প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে। এখন এগুলোর মালিক যুক্তরাষ্ট্র বা তার মনোনীত এজেন্ট কনোকো-ফিলিপস। এটা ভাবতেই আমার খুব কষ্ট হয়। ঐ সমুদ্রের কোন মালিকানা আর আমাদের নেই। আপনাদের কি কষ্ট হয় না? চোখের সম্মুখ দিয়ে এতবড় লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, আপনাদের বোধের দরজায় একবারও কি হুহু করা আর্তনাদ শুনতে পান না?

আমাদের রাজনীতিবিদরা তাদের উদুরপূর্তির জন্য বাংলাদেশের সকল নাগরিকের এই সম্পদ নব্য ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাছে আজীবনের জন্য বিক্রি করে দিল। একবারও কি আপনাদের জানতে ইচ্ছে করেনা কি সম্পদ লুকিয়ে আছে সমুদ্রের ঐ তলদেশে? যা জানাতে সরকার ইচ্ছুক নয়। সতের কোটি জনগনের এই দেশে সতের লক্ষ্য মানুষেরও কি আগ্রহ নেই জানতে সরকারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে? সতের হাজার জনগণেরও কি ইচ্ছে করেনা আমাদের এই সম্পদ লুন্ঠনের প্রতিবাদ জানাতে? হায় সেলুকাস! আমরা কি এতই অথর্ব জাতি হয়ে গেলাম। আমার এখন বিশ্বাস করতে লজ্জ্বা লাগে, এই আমরাই বৃটিশদের তাড়িয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, এই আমরাই এক হুঙ্কারে আমাদের রাষ্ট্র ভাষার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিলাম। লাটি-সোটা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর এক হুঙ্কারে মাত্র নয়মাসে একটি সসস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি দেশের জন্ম দিয়েছিলাম। ধিক্‌ আমাদের জাতিয়তার প্রতি। ধিক্‌ সংগ্রাম মুখর প্রতিবাদী বাঙালীর ঐতিহ্যর প্রতি।

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, সরকারের সাথে কনোকো-ফিলিপসের ষড়যন্ত্রের এই চুক্তিতে আসলেই কি আছে। তেল-গ্যাস-সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটির এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার এই চুক্তিটির বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে এত অনীহা দেখাচ্ছে কেন? গত কিছুদিনের জাতীয় কমিটির এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহন সত্বেও সরকারের নির্লিপ্ত ভূমিকা অবাক করার মত। পাশাপাশি খালেদা-এরশাদ-জামায়তসহ বামদলগুলিও সরাসরি মুখে কুলুপ এটে আছে। মিডিয়গুলোও কানে তুলো দিয়েছে, চোখে কালো চশমা দিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে? চুক্তি না দেখেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আলোচিত এই চুক্তিকে ‘যৌক্তিক’ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এটিকে ‘দূরদর্শী’ ও ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়েছে। কি এত মুল্যবান সম্পদ বাংলাদেশের ছোট্ট সমুদ্রের তলদেশে আছে? যা লুন্ঠন করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী এই বেনিয়া কোম্পানী সবাইকে কিনে নিয়েছে? চিন্তা করছি, কত শত শত কোটি টাকা বিতরণ করলে এতগুলো মুখ বন্ধ রাখা যায়? আসুন আমাদের এই সমুদ্রের তলদেশকে স্বল্প কিছু তথ্যের আলোকে ব্যবচ্ছেদ করি।

আমরা জানি, একটি দেশের কোন পণ্য যখন সে দেশের জনগোষ্ঠির পরিপূর্ণভাবে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত না থাকে, তখন সে পণ্যটিকে রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্য হিসাবে রপ্তানীনীতিমালা করা হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ জ্বালানী ক্ষেত্রে আমদানী নির্ভর দেশ হিসাবে পরিচিত। সঙ্গত কারণে, বাংলাদেশের রপ্তানীনীতিতে যে কোন ধরণের জ্বালানী পণ্য রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্য হিসাবেই পরিগণিত হয়ে আসছে এবং রপ্তানীনীতিতে যে কোন ধরণের জ্বালানী পণ্য রপ্তানী নিষিদ্ধ পণ্যর তালিকায় অর্ন্তভূক্ত ছিল। কিন্তু, সরকার কনোকো-ফিলিপস’র সাথে যে পিএসসি-২০০৮ (প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট, উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) নামের চুক্তিটি করছেন, এতে রপ্তানীর সুবিধা প্রদান করেই চুক্তিটির সম্পদনা করেছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চুক্তির প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় থেকে পরবর্তী ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত চুক্তির কোন বিষয় জনসম্মুখে প্রকাশ করা যাবে না!

কিন্তু কেন? কি আছে ঐ চুক্তিতে? যা দেশের মানুষ জানলে চুক্তি সম্পাদনকারীদের সমস্যা হবে? তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী দেশের নাগরিকের সকল বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আছে। শুধুমাত্র দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সরকার জনসম্মুখে প্রকাশ করবেনা। জনস্বার্থে করা এই চুক্তিটি কোনভাবেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বা সমরনীতিতে পড়েনা বলেই স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মালিক রাষ্ট্রের জনগণ। সে হিসাবে সরকার জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সেবক বই আর কিছুই নই। জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত এই জনপ্রতিনিধিগণ জনকল্যানে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকান্ড পরিচালনা ও জনগণের কল্যানময় সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহন করবেন মাত্র। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারের গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রের জনগণকে সরকার জানাতে বাধ্য। জনগণের চাহিবামাত্র সরকার গৃহীত যে কোন সিদ্ধান্ত জনসম্মুখে প্রকাশ করা সরকারের নৈতিক ও সাংবিধানিক দ্ধায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাহলে কনোকো-ফিলিপস’র সাথে সরকারের এই চুক্তিটি নিয়ে জনগণের সাথে লুকোচুরি খেলার কি অর্থ হতে পারে? এতে সরকার কি তথ্য অধিকার আইন লঙ্গন করে জনগণকে সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন না? অথবা সরকার নিজেই সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর খুশীর জন্য দেশের জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন না?

যে দেশটি বর্তমানে প্রচন্ড এক জ্বালানী সংকটের মধ্যে পতিত, সেদেশের সরকার কনোকো-ফিলিপস’র সাথে রপ্তানীমুখী এই জ্বালানী চুক্তিটি কিভাবে করে? আমরা স্পষ্টভাবে সরকার থেকে জানতে চাই?

এখন আসুন জেনে নেই এই চুক্তির উদ্দেশ্য কি? জাতীয় স্বার্থবিরোধী এই চুক্তির মধ্য দিয়ে সমুদ্রের দুটি ব্লকের ওপর মার্কিন বহুজাতিক সংস্থার দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। শুধু তাই নয়, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের গ্যাসসম্পদের ওপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার দখলস্বত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হলো। শুরু হলো সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের নতুন এক অধ্যায়ের। দু’শ বছরের বৃটিশ আধিপত্যের পর এখন শুরু হল সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য। এক গোলামীর জিঞ্জির থেকে মুক্তি পেয়েও যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। নতুন গোলামীর জোয়াল আমাদের ফুলবাণুর সরকার আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিল। বাঙালীর জন্মই কি হয়েছে আমৃত্য গোলামীর জোয়াল কাঁধে বহন করার জন্য?

কি আছে এই চুক্তিতে? কি পাব আমরা? চুক্তিতে আছে সব কিছু ছিনিয়ের নেওয়ার আরব্য রজনীর সেই দানবীয় কাহিনী। চুক্তির মহা মারপ্যাচে আমরা কিছুই পাব না। আমাদের চোখের সামনে দিয়ে সব হাঁসি মুখে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে সাম্রাজ্যবাদী দালালেরা। চুক্তির ১৫.৫.৪ ধারায় আছে, ‘বাংলাদেশ যদি সমুদ্রের ১৭৫ মাইল দূরের গ্যাসক্ষেত্র পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিবহন ব্যবস্থা (পাইপ লাইন) স্থাপন করে, তাহলেই কেবল বাংলাদেশের পক্ষে পেট্রোবাংলা তার অংশের লভ্যাংশ গ্যাস রাখার অধিকার পাবে, তবে তা কোনোমতেই মোট প্রাপ্ত গ্যাসের ২০ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু এই ২০ শতাংশ গ্যাস যদি আমাদের পেতে হয়, তবে ১৭৫ মাইল পাইপলাইন আমাদেরকেই বসাতে হবে। উত্তাল এই সমুদ্রে পাইপ লাইন বসানো চাট্টিখানি কথা নয়। শুধু পাইপলাইন বসালেই কাজ হবে না। উত্তাল এই সমুদ্রের পানি শাসন, সামুদ্রিক ঝড় থেকে এই পাইপলাইনের সুরক্ষার জন্য যে স্টিলের সার্পোট বসাতে হবে তার খরচও বিশাল অংকের। সমুদ্রের গ্যাস ক্ষেত্র থকে স্থলভাগ পর্যন্ত এই পাইপলাই টানতে খরচ পড়বে কনোকো-ফিলিপস এর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রায় ৩/৪ গুন বেশী। বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, এর চেয়ে অনেক কম খরচে মায়ানমার থেকে স্থল পথে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানী করা অনেক সহজসাধ্য ব্যাপার। অথবা বর্তমানের জ্বালানী সংকট মিটানোর জন্য বিদেশ থেকে তরলাকৃতির গ্যাস আমদানী করাও অনেক সহজসাধ্য ব্যাপার।

এদিকে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান, বাপেক্স আবিষ্কৃত দেশের স্থলভাগের সম্ভাব্য বৃহত্তম ‘সুনেত্র’ থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য সংস্থা মাত্র ২৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। এই গ্যাস ক্ষেত্রে প্রচুর গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে। অথচ সরকার এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। আর সমুদ্রের গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সব ব্যবস্থা দ্রুত করার জন্য সরকারের তৎপরতা অবশ্যই সন্দেহজনক।

চুক্তির ১৫.৫.১, ১৫.৫.৪, ১৫.৫.৫ ও ১৫.৬ ধারায় বর্ণিত শর্তসাপেক্ষে এবং ১৫.৫.২ ধারায় বর্ণিত হিসাব অনুসারে কনোকো-ফিলিপস চুক্তিকৃত এলাকায় উৎপাদিত যে কোনো পরিমাণ বিপণনযোগ্য গ্যাস বাংলাদেশের অংশসহ এলএনজি বা তরলায়িত করে রপ্তানির অধিকার পাবে। আবার কনোকো-ফিলিপস বাংলাদেশকে গ্যাস কেনার আহবান জানাবে, কিন্তু তা গ্যাস আকারে দেবে, তরলায়িত করে নয়। সেটি অবশ্যই বাংলাদেশ কর্তৃক স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অংশের ২০ শতাংশ। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশকে তার ক্রয়কৃত বা প্রাপ্ত নিজস্ব হিস্যার গ্যাস কনোকো-ফিলিপস-এর পক্ষ থেকে পৌঁছে দেওয়ার দায়দায়িত্বের বিষয়টি চুক্তিতে নেই। তাই সমুদ্র পৃষ্টের ঐ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে এক তোলা গ্যাস পাওয়ার আদৌ কোন সম্ভবনা নেই।

চুক্তির ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, পাইপ লাইন নির্মাণের অধিকার কনোকো-ফিলিপসের থাকবে। কিন্তু সেই পাইপলাইনের গ্যাস কনোকো-ফিলিপস থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্য (অবশ্যই উচ্চ মূল্যে) অনুযায়ী বাংলাদেশকে কিনে নিতে হবে। যেখানে বাপেক্সসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম প্রতি হাজার ঘনফুট ২৫ টাকা। সেই একই গ্যাস চুক্তি অনুযায়ী কনোকো-ফিলিপস থেকে পেট্রোবাংলা তা ভর্তুকি দিয়ে কিনতে হবে প্রতি ঘনফুট সাড়ে তিন ডলার বা ২১০ থেকে ২৫০ টাকায় এবং এই বহুজাতিক কোম্পানির কর্পোরেট ট্যাক্সও পেট্রোবাংলাকে পরিশোধ করতে হবে। চুক্তির শর্তানুযায়ী পেট্রোবাংলা কনোকো-ফিলিপস থেকে বিদেশী মুদ্রায় নিজের দেশের এই গ্যাস কিনতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এতে চাপ পড়বে বিদেশী রিজার্ভের উপর। যাকে বলে নিজভুমে পরবাসী। উৎপাদন অনুযায়ী যদি বাংলাদেশ/পেট্রোবাংলা গ্যাস ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়, তবে তারা ঐ গ্যাস তরলাকৃত অবস্থায় বিদেশে রপ্তানী করবে। তবে কোন ক্রমেই তরলাকৃত গ্যাস থেকে বাংলাদেশ কোন অংশই পাবেনা বা ক্রয় করতেও পারবেনা। সবচয়ে বড় কথা হচ্ছে, চুক্তিতে অতি কৌশলে পেট্রোলিয়ামজাত বিষয়টিও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ সমুদ্রপৃষ্টের এই ব্লকদুটিতে গ্যাস পরবর্তী তেল প্রাপ্তির বিষয়টি কনোকো-ফিলিপস শতভাগ নিশ্চিত হয়েই এই চুক্তিটি সম্পদান করেছে। চুক্তি অনুযায়ী এই তেলের হিস্যা আমাদের কতটুক আছে বা আমরা কতটুকু পাব তা অনুমান করলেই বুঝতে পারবেন।

এদিকে পিএসসি ২০০৮-এর ১০.২৭ ধারাতে অদক্ষতার কারণে বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের যে বিধান ছিল, তা সংশোধন করে আমাদের ফুলবানু কনোকো-ফিলিপসকে রেহাই দিয়েছেন। অর্থাৎ, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার দায় থেকেও এই বহুজাতিক সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হলো। আর কনোকো-ফিলিপস যে দূর্ঘটনার মহারাজা তা আমার পূর্বোক্ত এক লেখায় বিস্তারিত বর্ণনা করেছিলাম।

আমরা এখনো বিস্মৃত হইনি মার্কিন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল-ইউনিকলের সাথে সম্পাদিত সেই কালো চুক্তির কথা। আমরাতো এখনো ভুলে যাইনি অক্সিডেন্টালের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা ও ত্রুটির কারণে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়ায় ব্লো-আউটের কথা। ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী কোনো সরকারই বিগত ১৪ বছরে মাগুরছড়ার গ্যাসসম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানি অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারেনি। অক্সিডেন্টাল-ইউনোকলের সাথে কালো চুক্তির পক্ষে যারা শোরগোল তুলেছিলেন, তারাই এই কনোকা-ফিলিপসের সাথে চুক্তি প্রণয়নে মূল ভূমিকা রেখেছেন।

সতের কোটি মানুষের এই দেশে সরকারের ৪০/৫০ জন মন্ত্রী-উপদেষ্টার কাছে আমরা কি জিম্মি হয়ে থাকব? আমাদের ৫০ বছরের জ্বালানীকে আমরা এভাবে নিরবে লুট হয়ে যেতে দেব? আমরা কি আসলেই এত বড় নপংসুক জাতি?

যদি আমরা চুপ করেই থাকার মানসিকতা নিয়েই থাকি, তবে আসুন আমরা এখন থেকেই আদিম যুগে ধাবিত হওয়ার চর্চায় মত্ত হই। আমাদের শস্যদানাগুলোকে পনিতে ভিজিয়ে খাওয়ার চেষ্টায় মত্ত হই। এখন থেকেই গরুর গাড়ীতে চলার জন্য অভ্যস্থ হয়ে উঠি। পাথরে ঘর্ষনের মাধ্যমে আগুন জ্বালানোতে নিজেদের রপ্ত করে তুলি। সন্ধ্যার পরে এখনই আমরা অন্ধকারে রাত্রিযাপনে নিজেদের অভ্যস্থ করে তুলি। গাছের বাকল পরে নতুন ফ্যাশনের যাত্রা শুরু করি। নিজেদেরকে কাঁচা মাছ-মাংশ ভক্ষনে উপযুক্ত করে তুলি।

আমাদের পিঠকে নীলচাষীদের মত নির্যাতন সইবার উপযুক্ততা করে গড়ে তুলি।

অবাক বাংলাদেশ। তোমার বুকে আবার শুকুনীদের আগমন ঘটেছে। ক্ষমা করো হে দেশ আমাদের। আমাদের হাতগুলো আর বজ্রমুষ্টি হয় না। আমাদের কন্ঠগুলো প্রতিবাদের ভাষায় আর রিনিঝিনি করে না। আমাদের রক্তগুলো সাদা হয়ে গেছে। ক্ষমো হে দেশ, ক্ষমো মোদের। ক্ষমো মাতৃভূমি, ক্ষমো মোদের!!!!

মূল লিংকঃ http://bit.ly/pvhLra

মাননীয় অসাধারণ প্রধানমন্ত্রী,
আপনি খুবই ভালো লেখালেখি করেন এটা আমরা এখন বুঝি। কয়েকদিন আগে আমরা আপনার ব্লগে পড়েছি,দেশ কিভাবে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। সেই জোয়ার যে নুহ নবীর আমলের জোয়ারের চেয়েও বেশি উচু,সে ব্যপারেও আমি নিশ্চিত। আমি আসলে একজন নিরাশাবাদী লোক। দেশের এতো উন্নয়নও আমার চোখ এড়িয়ে যায়। আমার আসলে ভালো কারো কাছ থেকে বোঝা দরকার,সে জন্যই আপনার সাহায্য প্রার্থনা করছি। আপনি নিশ্চই এ বিষয়ে সবচেয়ে ভালো জানেন।
আমার প্রশ্ন খুব বেশি নয়,মাত্র কয়েকটাই।
১. বাংলাদেশ থেকে নেপাল যাবার ১৭ কিমি রাস্তায় ভারত ট্রানজিট দেয়নি,তাদের দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে বলে। আমাদের পুরো দেশের উপর দিয়ে কেনো ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে?
২. দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে,এই কথাটা হাস্যকর কি শুধু আমার কাছেই মনে হচ্ছে?
৩. ভিকারুন্নেসার ঘটনা নিয়ে এতো জল ঘোলা না করে একটা অমানুষকে এবং তার কয়েকজন সহযোগীকে কি খুব সহজেই শাস্তি দেয়া যেত না?
৪. সংবিধান সংশোধন করতে গিয়ে যে দ্রুততা সরকার দেখাতে পেরেছে,অন্য সব সময় এই দ্রুততা কোথায় থাকে?
৫. দেশের খাবারের দাম ন্যায্যমূল্য-কারণ আপনাদের খাবার কিনতে টাকা লাগে না;
বিদ্যুৎ এর কোন সমস্যা নেই-কারণ আপনাদের বাসায় লোডশেডিং হয় না;
যানযট এর কোন সমস্যা নেই-কারণ আপনারা যখন রাস্তা দিয়ে যান,তখন আমরা অতিরিক্ত ১ ঘন্টা জ্যাম খেয়ে আপনাদের ফ্রি রাস্তা নিশ্চিত করি
এই কয়েকটা কথা কি আপনারা জানেন?
৬. একটা দেশে ৬টা ছাত্রকে যখন ডাকাত বলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়,সে দেশের আইন শৃঙ্খলা কেমন বলে মনে করা উচিত?
৭. নিজের দেশের গ্যাস নিজে ১৮% পেয়ে,’অনেক পেয়েছি’-কিভাবে ভাবা যায়?আর,কিছু মানুষ এর প্রতিবাদ করায় তাদের পেটানোর পক্ষে যুক্তি কি?
৮. ভিকারুন্নেসার ঘটনার পর শুনেছি,যারা কিছু প্রতিবাদ করে লেখালেখি করেন-তাদের নাকি খুঁজে খুঁজে বের করা হবে।–স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা কি নতুন সংবিধান অনুযায়ী নিষিদ্ধ?

আমি জানি,আপনার অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট করেছি। আপনি দেশের জন্য অনেক ভাবেন,অনেক চিন্তা করেন-আমাদের মতো বাপের হোটেলে খেয়ে,ফালতু ব্লগ পড়ে তো আর সময় নষ্ট করেন না। ভালো থাকবেন আর আমাদের মতো ফালতু মানুষের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে বড়ই কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি নিশ্চিত এসব নিরীহ প্রশ্নের উত্তর দেয়া কোনো ব্যপারই না আপনার কাছে।

বিনীত,
একজন সাধারণ মানুষ

মূল লিংকঃ http://on.fb.me/oiay2A

গল্পটা নামকরা রাজ্যের নামকরা এক পত্রিকা নিয়ে । পত্রিকার নাম ” নৈতিকতা গেলো ” ।
এই পত্রিকার মহা কাটতি , বহুত সুনাম ।
এখানে সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন , মেধাবীদের সম্বর্ধনা , গুনীদের কদর , কত্ত কিছু !!
দেশের টুকটাক ঝামেলাতেও পাবলিক পীর মানে এই পত্রিকাকে ।

হঠাৎ একদিন উদয় হইল ঘরিমলের ঝামেলা ।
প্রিয় ” নৈতিকতা গেলো ” পত্রিকা ভাবলো এই সব ফাউল ঝামেলাকে কি পাত্তা দিলে চলে ?
তারা পুচঁকে পলাপাইনদের নাক সিটকাইয়া এসি রুমে বসে কফির কাপে চুমুক দিলেন । কী শান্তি ।

একদিন কার্যালয়ে খবর আসলো কালকে ৯ তারিখ ঐ সব বাপের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বাচ্চাগুলা কী যেনো মানব বন্ধন – কাবাব রন্ধন type আয়োজন করতেছে ।
ধূর এগুলো কি পাত্তা দেয়ার জিনিষ নাকি ? তাছাড়া ” হুচনে আরা ” বুবুর প্রানের বান্ধবী আর ” ঘড়িমল ” তো টোপাল্গঞ্জের হীরার টুকরা ছেলে ।
দূর দূর !!
ছেঃ ছেঃ !!
বাচ্চা কাচ্চাদের ইমশন কদিন পড়েই শেষ ।

বাচ্চারা রোদে দাঁড়িয়ে দিনভর মানব বন্ধন – কাবাব রন্ধন করলো তাদের Gold fish ইমশোন নিয়ে , একটা word ও আসলো না ” নৈতিকতা গেলো ” পত্রিকায় ।
হুচনে আরা খুশি , ঘড়িমল শ্বশুর বাড়ি গিয়েও খুশি , উপর লেভেল সব খুশি ।
” নৈতিকতা গেলো ” পত্রিকা তখন লাভের অঙ্ক হিসেব করতে করতে খুশি ।

এরই মধ্যে আমাদের প্রিয় এই পত্রিকা বলা নাই কওয়া নাই কী কারনে যেন Alpha detector মাইক্রোস্কোপ নিয়ে মেয়েটার কাপড় চোপড় গবেষনা করতে শুরু করলো । প্রতিটা জামার দৈর্ঘ্য প্রস্থের ইঞ্চি বাই ইঞ্চি সেলাই কতটুকু ফাঁক ছিল , স্কার্ট নাকি পেটিকোট পড়া ছিল ভাবতে লাগলো ।
অবশেষে বের হইলো আসল সত্য !!
এতোদিনে যাক উদঘাটন হইলো মেয়েটা কী পরা ছিল !!
Alpha Detector Microscope বইলা কথা !!

এরপর ঘটনার পর ঘটনাতো চলতেই থাকলো । ভদ্র ঘরের হয়ে বেশরম মেয়েগুলা আন্দোলন চালিয়ে যেতেই লাগলো ।
” ছ্যানেল ” গুলাও ভাবলো ডাঙ্গায় এসে কুমিরের সাথে উৎপাৎ , দাড়াও দেখাচ্ছি মজা ।
একেক মুহুর্তে একেক খবর , একেক ” ছ্যানেল ” একেক রকম ।
গবেট পাবলিকও ধোকা খাইতে খাইতে জানে আমাশয় বানায় ফেললো ।
শেষ পর্যন্ত সবাই চোখ রাখলো ” RACE হোক ” নামক social মিডিয়ায় ।
ঐখানে আবার বজ্জাত বিটলা পোলাপাইঙ্গুলা সব বলে দিতে লাগলো । কী মুসিবত !!

আন্দোলনের এই পর্যায়ে ” নৈতিকতা গেলো ” পত্রিকা ব্যাপক নাখোশ ।
এই রকম উদ্ভট ” RACE হোক ” মিডিয়া তাদের বাজার মারতেছে ।
” হুচনেআরা ” “ঘরিমল” কেও তো তাদের বাজার ফিরাইয়া দিবেনা । এই টপ লেভেলের জন্য কত কিছুই না করলো , তাদের report এর মধ্যে ” ৩য়, ৪র্থ, ৫ম শক্তি ” ঢুকায় দিলো , সাধারন নিষ্কলুশ আপাগুলাকে ” জামাআত product ” বলে চালায় দিলো , এখন তাদের ধপ্‌ করে বইসা পড়া বাজার আবার কে ফিরায় দিবে ?

হঠাৎ করে ১৭ই জুলাই তারা তাজ্জব বানাই দিলেন সবাইকে । সঠিক নিউজ দেয়া শুরু করলেন ।
Ex – Viqi দের একটা লেখাও ছেপে দিলেন ।
কত কিছু যে দেখলাম এই কয়দিনে । তেলেসমাতি আর তেলেসমাতি ।
তারপরেও তাদের ধন্যযোগ ।

মূল লিংকঃ http://on.fb.me/mPFgWS

“ধুরো ভাই, এগুলো ভেবে কি কোন লাভ হবে?”

“তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আমি তো ভালই আছি! খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, মুভি দেখতেসি, গেম খেলতেসি!”

“এদেশের কোন ভবিষ্যত নাই, আমি বাইরে চলে যাব।“

হ্যাঁ, এ কথাগুলো আমাদের আশেপাশের কিছু মানুষের কথা। তবে বাস্তবে এই কথাগুলো আমাদের প্রজন্মের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা তাদের মনে ধারণ করে।

বিশ্বাস না হলে কথা বলেই দেখুন না আপনার পাশের মানুষটির সাথে! বেশি পেছনে যাবার দরকার নেই কিন্তু! জানতে চান সাম্প্রতিক সময়ে কনকো ফিলিপস এর সাথে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস চুক্তি নিয়ে, ভিকারুন্নিসার আন্দোলনে সরকার এবং মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে তার ভাবনাগুলো। আমি কিন্তু মনে প্রাণে চাই আপনি হতাশ না হোন, বরং এই বিষয়গুলো নিয়ে একটা খোলামেলা আলোচনা হোক। এক কানে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দেওয়ার মত, আড্ডা শেষেই ভুলে যাবার মত আলোচনা নয়, বরং এমন কিছু যা আপনাদের দুজনকেই তাড়িত করবে কিছু একটা করার, কোনভাবে এই দৃশ্যগুলো বদলে দেবার।

কিন্তু তা হয়ে ওঠে না সচারাচর! কারণ আমরা অনেক কিছুই জানিনা। জানলেও তা অনেক কম বা কানের এক দিক দিয়ে ঢুকাই আরেক দিক দিয়ে বের করে দেই! আর যতটুকুই বা জানি, তার অনেক খানিই থাকে হলুদ রঙ মাখানো।

সাধারণত দেশ বিদেশে ঘটে যাওয়া খবরাখবর আমরা পাই মিডিয়া থেকে। মিডিয়া মানে, সংবাদপত্র কিংবা দেশী চ্যানেলগুলোর খবর। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আমার দুটো অভিজ্ঞতা বলি,

১. ক্যাম্পাসের এক বন্ধুর ফোনে হঠাৎ আরেক সিনিয়র ভাইয়ের ফোন-
“কিরে, তোরা রিইউনিয়ন কইরা ফালাস, আমাদের কোন খবরও দেস নাই!”
“কই না তো ভাই! কেন কি হইসে?!”
“মিয়া ভং ধর? পেপারে পড়লাম তোরা রিইউনিয়ন করসস!”

বাস্তব ঘটনা হোল, ক্যাম্পাসের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কোন এক প্রোগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়ে যাওয়া কিছু সিনিয়র এমনিতেই এসে যোগ দিয়েছিলেন। আর পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে ঘরে বসেই খবর লিখে পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন। পরদিন পত্রিকায় ছাপা হয় ঐ সংগঠনটির রিইউনিয়ন এর খবর। আর তা দেখেই উক্ত বড় ভাইয়ের ফোন!

২. কিছুদিন আগে আমরা কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী মিলে তেল-গ্যাস চুক্তি সাক্ষরের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও যোগদান করে। কর্মসূচীতে ছিল কার্টুন প্রদর্শনী, সংগীত পরিবেশন, পুথি পাঠ এবং মুক্ত আলোচনা। সন্ধ্যায় কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করে আমরা সবাই বাড়ি ফিরে যাই। পরদিন একটি বহূল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক আমাদের কর্মসূচীর খবর বেশ গুরুত্ব সহকারে ছাপে। তাতে আমাদের কর্মসূচীর বেশ ভাল বিবরণ থাকলেও রিপোর্ট এর শেষ লাইনে বলা হয় আমরা সমাবেশ শেষে একটি র‍্যালীর আয়োজন করি! অথচ আমরা কেউ তখন মনে করতে পারলাম না সমাবেশ শেষে সেই সন্ধ্যাবেলা আমরা কখন আবার র‍্যালী করলাম!

হ্যাঁ, এটাই আমাদের মিডিয়া। খবর বানানো, সত্যকে চেপে যাওয়া, আংশিক সত্য প্রকাশ এগুলো নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। আর আমরা যারা ঘটনাস্থলে থাকিনা, যাদের খবর জানার একমাত্র উপায় এই মিডিয়া তারা কি সরল মনেই না এসব বিশ্বাস করি!

অতি সম্প্রতি ভিকারুন্নেসানুন স্কুল এন্ড কলেজে যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার ও অপরাধীকে সহায়তার অভিযোগে অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে সংগঠিত আন্দোলনের ঘটনায় অন্য অনেক কিছুর সাথে দেশের কিছু প্রথম সারীর মিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ অনেকেরই চোখ থেকে একটি পর্দা সরিয়ে দিয়েছে। এসব মিডিয়ার সুশীলতা আর ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা হলুদ প্রাণীটি বের হয়ে এসেছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, মিডিয়া তাদের চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছে, কাজ করেছে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর পক্ষে, আন্দোলনের খবর প্রকাশ করেনি। আর করলেও খবর বদলে দিয়েছে। ঐ স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সাবেক ছাত্রীরা যখন শুধুমাত্র তাদের বোনের জন্য বিচার চাইতে আর এক অসৎ ও অপরাধীকে সহায়তা দানকারী অধ্যক্ষকে অপসারণের জন্য আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে তখন মিডিয়া এই আন্দোলনকে দিয়েছে রাজনৈতিক রঙ। বলেছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে কোন তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে নাকি কতিপয় ছাত্রী আন্দোলন করছে। আর ঘটনাস্থলে মিডিয়া কর্মীরা কি করেছে তা জানতে চান? পড়ুন,

এক সাংবাদিক বললেন, “আপনারা ক্লাস বর্জন করলেন কেনো?”
জবাবে এক ছাত্রী বললেন “আপনার বোন রেইপড হলে আপনি কি করতেন?”
সাংবাদিকঃ দিস ইজ নান অব মাই বিজনেস। আমি হলে ক্লাস করতাম।
ছাত্রীঃ আপনারা আছেন আমাদের বারবার একই প্রশ্ন করছেন। আমাদের অবস্থা বুঝছেন না। সকাল থেকেই তো নিউজ নিচ্ছেন। কই? পাবলিশ তো করছেন দায়সারাভাবে।
সাংবাদিকঃ তো! আমি কি করতে পারি?
ছাত্রীঃ তো! পাবলিশ হচ্ছে না কেনো? টাকা খেয়েছেন? নাকি উপরের চাপ?

এই কথা শোনার পর রাগ করে বেরিয়ে গেলেন এনটিভি আর দেশটিভির সাংবাদিকরা। যাবার আগে জানিয়ে গেলেন, “এখন দেখবা তোমাদের নিউজ কিভাবে যায়। তোমাদের সাহস কমানোর সময় এসেছে।”

না এই খবর কোন পত্রিকায়, কোন মিডিয়ায় আসেনি। এ খবর সেদিন এক ব্লগার তার আন্দোলনকারী কিছু পরিচিতজনদের সহায়তায় ব্লগে পোষ্ট করেছিল। এভাবেই সেদিন আন্দোলনের সব সত্যি এবং মিডিয়ার চেপে যাওয়া খবরগুলো সবার কাছে পৌঁছে যেতে থাকে ব্লগ, ফেসবুক কিংবা টুইটারের মাধ্যমে!

কিছুদিন আগে এক বন্ধুর সাথে আলাপকালে সে বলছিল বাংলাদেশের ভবিষ্যত অন্ধকার। যেমন চলছে তেমনি চলবে কিংবা অবস্থা আরও খারাপও হতে পারে! আমি তাকে বলেছিলাম হতাশ না হতে। বাংলাদেশের আজকের প্রজন্ম আর তার আগের প্রজন্মগুলোর সাথে তফাত অনেকটা! আগে সবার তথ্য জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল খবরের কাগজ, টেলিভিশন সংবাদ। একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ফোন কিংবা চিঠি। এখন ছেলেমেয়েরা কিন্তু আর খবরের কাগজ কিংবা, টিভির সংবাদের ওপর নির্ভর করেনা! তারা ব্লগ পড়ছে, ইউটিউব দেখছে, সত্য জানছে। ফেসবুক/টুইটারের মাধ্যমে দেশের এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্ত এমনকি বিদেশের সাথেও যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। যে কোন তথ্য মূহুর্তে মাঝে শেয়ার-রিশেয়ার কিংবা টুইট-রিটুইট হয়ে যাচ্ছে। ছড়িয়ে যাচ্ছে তথ্য, ছড়িয়ে যাচ্ছে সত্য। কে থামাবে পারবে এই তথ্য স্রোত?

যারা আমাদের ক্ষতি করতে চায় তারা আমাদের জানতে দিতে চায় না আমাদের ক্ষতির কথা। কারণ, মানুষ যখন জানতে পারে তার ক্ষতি হচ্ছে তখন সে ঠিকই রুখে দাঁড়ায়। নিজের ভাল পাগলেও বোঝে! তাই সবসময় চেষ্টা থাকে যে কোন ভাবে সত্যকে চাপা দিতে, মিডিয়ার সংবাদকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাবিত করতে, যারা মানুষজনকে সত্যটা জানাতে পারবে তাদের কন্ঠ রোধ করতে। কিন্তু এই পরিবর্তিত প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবে এই অবিরাম তথ্য স্রোত থেকে?

যে সাধারণ মেয়েটি সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হিন্দি সিরিয়াল দেখত সে একদিন ঘটনাক্রমে দেখল তার বন্ধুর ফেসবুকে শেয়ার করা কিছু লিংক। পেল কিছু টুকরো খবর।

মার্কিন প্রতিষ্ঠান কনকো ফিলিপস এর সাথে গভীর সমুদ্রের সম্ভাবনাময় গ্যাস ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য চুক্তি করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী কনকো ফিলিপস বিনিয়োগ করবে ৭০০ কোটি টাকা। আর এই বিনিয়োগের বিনিময়ে তারা পাবে প্রাথমিকভাবে মোট গ্যাসের ৫৫% ই, এর নাম ‘কষ্ট রিকভারী’ গ্যাস। অবশিষ্ট ৪৫% ‘লাভের গ্যাস’ ভাগাভাগি হবে বাংলাদেশ ও কনকো ফিলিপস এর মধ্যে। উত্তোলিত গ্যাসের পরিমাণভেদে এই ৪৫% এর ৫৫% থেকে ৮০% পাবে বাংলাদেশ। এখন লাভের গ্যাসের ৫৫% পাওয়ার মানে হলো মোট গ্যাসের ২৪.৭৫% পাওয়া, আর লাভের গ্যাসের ৮০% পাওয়া মানে মোট গ্যাসের ৩৬% পাওয়া। অথচ বলা হচ্ছে গ্যাসের ৮০% ই বাংলাদেশ পাবে। কষ্ট রিকভারী হিসেবে আগেই নিয়ে নেওয়া ৫৫% এর কথা চেপে যাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জ্বালানী খাত নিয়ে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি নাকি গোপন রাখা হয়েছে দেশেরেই জনগণের কাছে। যেখানে আমাদের সংবিধান বলছে, এই গ্যাসের মালিক তো এ দেশের প্রতিটি মানুষ! মেয়েটি ভাবল, আমাদের কাছে চুক্তিটি গোপন করে, আমাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে সরকার কিভাবে চুক্তিটি করতে পারল? সে দেখল, চুক্তিটি হয়েছে পি.এস.সি ২০০৮ এর মডেল অনুসারে। গুগলে সার্চ করে নামিয়ে নিল পিএসসি মডেলের পিডিএফ। সেদিন মেয়েটিকে আর টিভির সামনে দেখা যায়নি। মেয়েটি বসে বসে পিএসসি মডেলের ফাঁকফোঁকর গুলো বের করছিল। করছিল কিছু সাধারণ হিসাব নিকাশ। মেয়েটি দেখল, পিএসসি মডেলের ১৫.৫.৪ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, ১০ বছরের আগে কোনোভাবেই বাংলাদেশ সর্বমোট বিপণনযোগ্য গ্যাসের (লাভের গ্যাসের) ২০% -এর বেশি রাখতে পারবে না। ১o বছর পর চাইলে সর্বোচ্চ ৩০% পর্যন্ত রাখতে পারে। মেয়েটি মাথায় বিদ্যুত খেলে গেল। তার মুখ থেকে অস্ফূটে বেরিয়ে এলে, আমরা ঠকছি!

মেয়েটি পরদিন খবরের কাগজে এক বিশেষজ্ঞের কলামে দেখল, আমাদের দেশের এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতি সত্ত্বেও বাইরের কোম্পানীর সাথে চুক্তি করার কারণ আমরা নাকি সক্ষম নই সমুদ্রবক্ষে গ্যাস অনুসন্ধান আর উত্তোলনে। সে সেদিন আবারও সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়ে ইন্টারনেটে বসল। আমাদের দেশেও তো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান আর উত্তোলন নিয়ে কাজ করে যেমন, বাপেক্স, বিজিএফসিএল। মেয়েটি বাপেক্স আর বিজিএফসিএল নিয়ে খোজ করা শুরু করল বিভিন্ন ওয়েব সাইট এ।
সে দেখল বাপেক্স গঠনের পর থেকে ১৯৮৯ পরবর্তী সময়ে বিদেশী কোম্পানিগুলো ১৭ টা অনুসন্ধান কূপ খনন করে, বেশ কিছু গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার করে (যেগুলোর সাম্ভাব্যতা আগেই পেট্রোবাংলা/বাপেক্স বের করেছিল), দুটো গ্যাসক্ষেত্র ধ্বংস করে ফেলে আর এর বিপরীতে বাপেক্সকে দেয়া হয় মাত্র হাতে গোনা কয়টি ক্ষেত্র, তার মধ্যেও বাপেক্স সালদানদী, শাহবাজপুর ও শ্রীকাইলে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে। অনুসন্ধান কুপ খনন করে ৪ টি, যার ৩ টিতেই গ্যাস মিলে। অর্থাৎ সাফল্যের হার ১.৩৩:১! বাপেক্স নাইকোর একটা কুপ (ফেনী-২) খনন করে দেয়, টাল্লোর হয়ে লালমাই ও বাঙ্গোরায় Well Cellar Survey’র কাজ করে, চাঁদপুরে কন্ট্রোল পয়েন্ট স্থাপন করে দেয়। বাঙ্গোরায় টাল্লোর একটা কুপও (ওয়ার্ক ওভার) খনন করে দেয়। এমনকি পেট্রোবাংলার আরেক সেলফ ফাইনান্সিং গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিজিএফসিএল এর হবিগঞ্জ-৯ কুপ খনন করে দিলেও ঐ কুপ খননের জন্য বাপেক্সকে সরকারের বরাদ্দের দিকে থাকতে হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষায়!

মেয়েটি আরও দেখল, রাস্ট্রায়ত প্রতিষ্ঠানগুলো এ পর্যন্ত ১৮ টি অনুসন্ধান কুপ খনন করে ৮ টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। সাফল্যের হার ২.২৫:১, যা বাংলাদেশ কর্মরত বিদেশী কোম্পানীর সাফল্যের হারের চেয়ে ভালো। পেট্রোবাংলা নিয়মিতভাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ যোগান দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা, সেখানে ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩১৫০ কোটি টাকা এবং ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৩৩৪৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাপেক্স দিয়েছে ৮২ কোটি টাকা, সবচেয়ে বেশী দিয়েছে বিজিএফসিএল – ১৪৩১ কোটি টাকা! পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরকারকে প্রতি হাজার কিউবিক ফুট গ্যাস মাত্র ২৫ টাকায় দিতে পারে (মুনাফা রেখেই), যেখানে বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে খরচ হয় ২৫০ টাকা! এই চরম দূর্দশার মধ্যেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্জিত সাফল্যে মেয়েটি গর্ববোধ করে।

সম্প্রতি বাপেক্স কর্তৃক সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা দুটির সীমানা ছাপিয়ে মাটির নিচে বিরাট গ্যাসগ্যাক্ষেত্র ‘সুনেত্রা’ আবিষ্কার হয়। এর অর্ধেকটাই ব্লক ১২-এর অন্তর্ভুক্ত, যা অতীতে বিদেশি কোম্পানির হাতে থাকাকালীন তারা এটি শনাক্ত করতে পারেনি; পরবর্তীকালে বাপেক্স তার সাইসমিক জরিপের মাধ্যমে এটি ম্যাপ করে। এই খবর পড়ার সাথে সাথে মেয়েটি এদেশের সম্ভাবনাকে চোখ বন্ধ করে দেখতে পেল আর সবিস্ময়ে লক্ষ্য করল তার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে আনন্দের অশ্রুতে।

মেয়েটি হঠাত সম্বিত ফিরে পেল। চোখ মুছে সে গুগলে খুজতে থাকল বিদেশী কোম্পানিগুলো কিভাবে গ্যাস উত্তোলন আর অনুসন্ধানের কাজ করে। জানতে পারল, কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের অনেক কাজই আউটসোর্সিং করে। নিজেরা পুরো কাজ না করে বিভিন্ন সাবকন্ট্রান্ট এর মাধ্যমে অন্য কোম্পানি দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। কিছুদিন আগে বিপি মেক্সিকো উপসাগরের যে মাকান্দো কূপে দুর্ঘটনায় ঘটিয়েছে, সে কূপে কাজ করছিল মূলত ট্রান্সওশান, হেলিবার্টন, স্লামবার্জার ইত্যাদি কোম্পানির যন্ত্রপাতি ও সার্ভিস ভাড়া নিয়ে। মেয়েটি ভাবল, স্থলভাগে আমাদর গ্যাস উত্তোলনের দক্ষতাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও তো গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করতে পারে। সেই উত্তোলিত গ্যাসের পুরোটাই তো তখন আমাদের থাকছে!

আমাদের দেশে বিদেশী কম্পানিগুলোর কাজের ইতিহাস সম্পর্কে খুজতে গিয়ে মেয়েটি জানতে পারল মাগুরছড়া আর টেংরাটিলার দূর্ঘটনার কথা, সেই দূর্ঘটনায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস সম্পদ আর পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ার পর ক্ষতিপূরণের হাত থেকে বাচতে এদেশের তৎকালীন জ্বালানী প্রতিমন্ত্রীকে নাইকোর দেওয়া ঘুষের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটির কথা।

মেয়েটির কাছে তখন সবকিছু দিনের আলোর মতই পরিষ্কার হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল, কেন বাপেক্স সত্যিকার অর্থে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সে এতদিন বাপেক্সকে অর্থব জানত। সে বুঝে যায়, কেন আমাদের আদমজী পাটকল বন্ধ হয়ে যায়, কেন বাংলাদেশের রেলওয়ের এত দূর্দশা, কেন আমাদেরই অবকাঠামো লিজ নিয়ে বিদেশী ফোন কম্পানিগুলো রমরমা ব্যবসা করে আর আমাদের টেলিটক পড়ে থাকে মূমুর্ষ অবস্থায়।

হ্যাঁ, ‘ওরা’ আমাদের মাথা উঁচু করে বাচতে দিতে চায় না। ‘ওরা’ চায়না আমরা আমাদের সম্ভাবনাগুলোকে পরিণত করি আমাদের শক্তিতে।
মেয়েটির হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল অজান্তেই। কিছু একটা করতে হবে। হাত বাড়িয়ে মুঠোফোনটা নিয়ে ফোন দিল বন্ধুকে। বলল, “কথা আছে, দেখা কর, এখনি…কিছু একটা করতে হবে।“
মা নাস্তা খেয়ে বের হবার কথা বললেও সে একরকম ঝড়ের গতিতেই বের হয়ে গেল বাসা থেকে।

কে থামাবে আজ ওকে?

১. ধরুন আপনার কাছে অনেকগুলো স্বর্ণের বার আছে। ধরা যাক ১২০টি বার, প্রতিটি আবার ১০ ভরি ওজনের। আপনি সেগুলো দিয়ে স্বর্ণালঙ্কার বানাতে চান। কিন্তু সমস্যা হল আপনি নিজে স্বর্ণকার নন। সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয় স্বর্ণকারের কাছে যাবেন। এখন স্বর্ণকার যদি দাবী করে যে তাকে ৮০টি বার দিতে হবে বাকি ২০টি বার দিয়ে আপনাকে স্বর্ণালঙ্কার বানিয়ে দেয়া হবে। আপনি কি তাতে রাজি হবেন?

অবশ্যই না।

কারন, সেক্ষেত্রে আপনি মোট চার কোটি টাকার স্বর্ণের থেকে মাত্র এক কোটি টাকার গহনা পেলেন আর বাকি চার কোটি টাকা স্বর্ণকার পেল। (১ ভরি = ৪০০০০ টাকা) স্বর্ণকারের কাজের মূল্য কখনোই এত বেশি না। এর থেকে লস আর কিই বা হতে পারে?

২. ধরুন আপনি বাসার কাজের জন্যে গৃহ পরিচারিকা (বুয়া) রাখেন। সে রোজ আপনার বাসায় এসে আপনারই চাল, ডাল, তেল, নুন, তরকারি দিয়ে রান্না করেন। এরপর সেই রান্নাকৃত খাবার আপনাকেই বুয়ার থেকে কিনে খেতে হবে। বুয়া একবারে অনেক খাবার রান্না করে। আপনার এত খাবার এর দরকার নেই। রান্না করা খাবার আপনি খেতে না পারলে তা অন্যখানে বেঁচে দিবে আপনারই বুয়া। আর সেই বিক্রির টাকাটাও আপনার গৃহ পরিচারিকার হয়ে যায়। আপনি কি এরকম একজন গৃহ পরিচারিকা আপনার বাসায় রাখবেন?

অবশ্যই না।

দরকার হলে হোটেল থেকে খাবার কিনে খাব। তারপরও এমন বুয়া রাখবো না।

৩. আপনার দাদার একটা চার তলা বাড়ী আছে। তার দুই ছেলে। তার মৃত্যুর পর সেই বাড়ীর অর্ধেক আপনার বাবা, অর্ধেক আপনার চাচা পেলেন। আপনারা দুই ভাই। স্বভাবতই আপনার বাবার দোতালা অংশের অর্ধেক আপনি আর আপনার ভাই পাবেন। তার মানে আপনি একতলার মালিক হবেন। এখন যদি আপনাকে আপনার বাবা তার অংশের অর্ধেক আপনাকে দিয়ে বলেন, ‘তোমাকে পুরো বাড়ীর অর্ধেক দিয়ে দিলাম’- সেটা কি মিথ্যা বলা হবে না?

অবশ্যই মিথ্যা। আমি তো বাবার অংশের অর্ধেক পেলাম। পুরো বাড়ীর অর্ধেক নয়।

উপরের তিনটি উদাহরণ আসলে সম্প্রতি কনকোফিলিপ এর সাথে করা গ্যাস চুক্তির সাথে মিলে যায়। এবং এই লেখাটা তাদের জন্যে যারা এরকম তেল-গ্যাস নিয়ে পোষ্ট পাওয়া মাত্র এতদিন তা স্কিপ করে গেছেন, অযথা মাঠ গরমের বিষয় ভেবেছেন, জানতে চাননি এবং জানতেও পারেননি এই ভয়াবহ চুক্তি সম্পর্কে!!!

১. ওরা বলেছে যে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে তার ৫৫% কনকোফিলিপ পাবে কষ্ট রিকভারির জন্যে। কষ্ট রিকভারি হল গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন বাবদ খরচ।
অবশিষ্ট ৪৫% গ্যাস যা পাওয়া যাবে সেটা সমান করে দু’ভাগ হবে। যা বাংলাদেশ (পেট্রোবাংলা) ও কনকোফিলিপ পাবে।

তার মানে বাংলাদেশ পাবে (৪৫/২)% = ২২.৫% গ্যাস।

আর কনকোফিলিপ পাবে (৪৫/২)% + ৫৫% = ২২.৫% + ৫৫% = ৭৭.৫% গ্যাস।

আমরা উত্তোলন করতে পারিনা। তাই বিদেশি কোম্পানীকে এই দায়িত্ব দিচ্ছি। বিবিময়ে প্রায় ৮০ ভাগ(৭৭.৫) গ্যাস দিয়ে দিচ্ছি। এটা কি স্বর্ণকারের উদাহরণের সাথে মিলে গেল না?

কিছু মিডিয়া ও পত্রিকায় এভাবে লেখা হয়- “অর্ধেক গ্যাস পাবে বাংলাদেশ”। আরে সেটা হল ০ আরে অর্ধেক মানে ৪৫% এর অর্ধেক , মানে মোট গ্যাসের ২২.৫%। আর ০ আর সাধারণ মানুষ শুনে বিভ্রান্ত হয়। যেমন বিভ্রান্ত হয়েছিলেন আপনার বাবার কথা শুনে।

কষ্ট রিকভারি হিসেবে ৫৫% অনেক বেশি। সরকার এই বিশাল ৫৫% এর ব্যাপারে বলে যে-
“এতে আমাদের কোনো ঝুঁকি নেই। গ্যাস পাওয়া না গেলে কনকোফিলিপ চলে যাবে। অনুসন্ধান বাবদ আমাদের কোনো খরচ করতে হবেনা। সবকিছু কনকোফিলিপের ওপর দিয়ে যাবে। এত বেশি রিকভারি থাকার কারণ- ঝুঁকিটা ওরা নিচ্ছে, আমাদের কোনো ঝুঁকি নিতে হচ্ছে না। যে কারণে আমাদের কোনো টাকাই বিনিয়োগ করতে হচ্ছে না।”(হুবহু মুখস্থ নেই)

এবার কষ্ট রিকভারির জন্যে ছোট একটা হিসাব কষি। (প্রথম ৫ বছরের জন্যে)

কনকোফিলিপ বলেছে যে, তারা ৫ বছরে ১১০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।(এটাই কিন্তু কষ্ট রিকভারি) সেটা টাকায় নিলে হয় প্রায় ৭০০ কোটি টাকা।

যদি কম গ্যাস পাওয়া যায়(৫-৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) তাহলে তার বর্তমান বাজারমূল্য হবে টাকা। এর ৫৫% হল ১১০৬২২ কোটি টাকা।

সেক্ষেত্রে কনকোফিলিপ শুধুমাত্র কষ্ট রিকভারি দিয়েই লাভবান হবে = (110622.6-700) কোটি টাকা = 109922.6 কোটি টাকা

যদি বেশি গ্যাস পাওয়া যায়(১০-১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) তাহলে তার বর্তমান বাজারমূল্য হবে টাকা। এর ৫৫% হল ২২০৫৪২ কোটি টাকা।

সেক্ষেত্রে কনকোফিলিপ শুধুমাত্র কষ্ট রিকভারি দিয়েই লাভবান হবে = (221245.2-700) কোটি টাকা = 220545.2 কোটি টাকা

যদি কোনো গ্যাস পাওয়া না যায় তাহলে কনকোফিলিপ লাভবান হবে = (0-700) কোটি টাকা = -700 কোটি টাকা। অর্থাৎ, ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে।

তারমানে, আমরা ‘গ্যাস পাওয়া যাবে না’-এই ভয়ে ৭০০ কোটি টাকার খরচ নিতে ভয় পাই, অথচ ১০০০০০-২০০০০০ কোটি টাকা হাতছাড়া করতেও কুণ্ঠাবোধ করি না।
এটা কি কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ মেনে নিতে পারে?

(এই হিসাবটি কখনোই একুরেট হবে না। তবে কিছুটা ধারণা করা যেতে পারে। ( http://www.forecasts.org/natural-gas.htm এবং Click This Link )এই লিঙ্ক দুটি থেকে এই হিসাবটা বের করা হয়েছে। নিচে হিসাব টা করে দেখানো হয়েছে।)

২. আমরা শুরুতেই ৭৭.৫% গ্যাস দিয়ে ওদেরকে বৈধতা দিলাম। এই ৭৭.৫% সংখ্যাটা দিনের আলোর মত স্বচ্ছ। এই তথ্যের সাথে সরকারও একমত হবে। অন্ততঃ মডেল পি এস সি ২০০৮ তো তাই বলে। ধরে নিলাম, আমরা ২২.৫% গ্যাস পেলাম(এর মধ্যেও কিছু যদি আছে)। আমরা এই গ্যাস ব্য। ০ আমরা এই গ্যাস ব্যবহার করব।
মডেল পিএসসি ২০০৮ এ আছে কনকোফিলিপ তাদের ৭৭.৫% গ্যাস প্রথমে আমাদেরকে কিনতে প্রস্তাব দিবে। যদি আমাদের ওই ২২.৫% গ্যাস+দেশের স্থলভাগের গ্যাস দিয়েও অভ্যন্তরীণ চাহিদা না মেটে তাহলে আমরা কনকোফিলিপ এর থেকে সেই গ্যাস কিনবো যেটা আসলে আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। কি আজব!!! বিষয়টা অনেকটা বুয়ার উদাহরণটির মত হয়ে গেল না?

আরেকটা কথা। আমাদের ওই ২২.৫% গ্যাস+দেশের স্থলভাগের গ্যাস এই আমাদের চাহিদা মিটে যাবার কথা। অন্ততঃ ৭৭.৫% খরচ তো দূরের কথা। সুতরাং, ৭৭.৫% গ্যাস কনকোফিলিপ রফতানী করবে। এখানে একটা মস্ত বড় ভুল কনসেপশন কাজ করে। তা হল, রফতানী মানেই আমরা লাভের উপকরণ মনে করি। আরে, রফতানী তো কনকোফিলিপ করবে, ওই ৭৭.৫% গ্যাসের মালিক তো আমরাই ওদের বানিয়ে দিয়েছি। ওই গ্যাস ওরা রফতানী করুক, খাক, চুলোয় দিক তাতে আমাদের কি? আমরা তো তার মালিক নই। অনেক মিডিয়াতে মানুষকে এই বলে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে যে, অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করতে না পারলে রফতানী করা হবে। সেটা হল কনকোফিলিপ এর রফতানী, আমাদের নয়।

মিথ্যা কথা আরো আছে। গ্যাসব্লকের ওপর ভারত এর দাবী আছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গ্যাস উত্তোলন করা হোক। স্পষ্টভাবে জানুন এই যে, যেই দুই ব্লক এ গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে তার কোনোটাতেই ভারতের দাবী নাই।

আরো অনেক কিছু আছে। যেগুলো নিয়ে এই লেখায় লিখবো না। সেগুলো হল দুর্ঘটনা, পাইপলাইন বসানো, রিকভারি কষ্ট বেশি দেখানো!!, ইত্যাদি। সেগুলো এই লেখায় দিলাম না। এই লেখাটায় মূলত তাদেরকে টার্গেট করা হয়েছে যারা তেল-গ্যাস চুক্তি নিয়ে কিছুই যানেন না। এ কারণে খুব বেশি রেফারেন্স দেইনি। গ্যাস চুক্তি নিয়ে এটা হতে পারে প্রাথমিক ধারণা। আরও জানতে নিচে মডেল পিএসসি-র লিঙ্ক এ ক্লিক করুন

এরকম হেডিং দেয়ার কারণ- তেল- গ্যাস ইস্যু নিয়ে কিছুদিন ব্লগ ও ফেসবুকে অনেক লেখালেখি হয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে দেখছে। আওয়ামী লীগের কোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বললেই বি.এন.পি বা যুদ্ধাপরাধী দল আর বি.এন.পি-র বিরুদ্ধে বললেই আওয়ামী লীগ করে-এরকম চিন্তা থেকেই অনেকে এসব পোষ্ট স্কিপ করে যান এবং জানতেও পারেন না কি ঘটছে। অনেকে আবার বাম দলের সাথে মাঠ গরম, প্রচার পাওয়া ইত্যাদির সাথেও যোগসূত্র খোঁজেন। আসল ব্যাপার হল- আমরা চাই আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা হোক, আমরাই যেন তার মালিক থাকি ও তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি। এ কারণে দেশবিরোধী কোনো চুক্তি থাকলে তার প্রতিবাদ করি।

হিসাবঃ
১মিলিয়ন BTU gas এর মূল্য= ৪.৫৩ডলার
১ TCF এর মূল্য=(10^15) BTU gas er dam = 4.53*(10^9)$ = 33522 koti tk
6TCF = 6*33522 koti tk
U = (6*33522*55/100) = 110622.6 koti tk

http://www.nagorikblog.com/node/5214
মডেল পিএসসি২০০৮
http://www.mediafire.com/?2nlz7m03e9li657

মূল লিংকঃ http://www.somewhereinblog.net/blog/usharalo123/29414295

বরাবর
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল
আমার প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ

বিষয় : শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন

জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার প্রথম শ্রেণির ভক্ত। আশেপাশের চল্লিশ বাড়ির মানুষ যখন আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, ‘এই দেশের কিছু হবে না, বিদেশ যাও গা’ তখন আমি আপনার কথা বলি। আমি বলি দেখ, এই লোকটা বিদেশের অনেক বড় বড় অফার ছুড়েঁ ফেলে দেশে ফিরে এসেছেন। মানুষকে আশা দিচ্ছেন। আগামীতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবে তাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, দেখাচ্ছেন স্বপ্ন পূরণের পথ। নানা পরিস্থিতিতে সবাই যখন হতাশ হয়ে ধপ করে বসে বলে, নাহ, দেশের কিচ্ছু হবে না। আমি তখনও আপনার কথা বলি। একটা বইয়ে আপনি বলেছিলেন, আমাদের হতাশ হবার কিছু নেই। সেটাই সবাইকে মনে করিয়ে দেই। অনেকই উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু এখন অবস্থা এমন যে আমি নিজেই হতাশ হয়ে যাচ্ছি। ছোট ছোট বাচ্চা যদি তাদের শিক্ষকের কাছে প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়, এবং সে সব শিক্ষকের বিচার না করে যদি নির্যাতিত শিক্ষার্থীকেই অপরাধী মনে করা হয় তাহলে হতাশ না হয়ে আর উপায় কি? সম্প্রতি ভিকারুননিসায় ঘটা ঘটনাটি নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন। ধর্ষক পরিমলের বিচার এবং অধ্যক্ষের পদত্যাগ, শিক্ষার্থদের নিরাপত্তার দাবীতে মেয়েরা ক্লাস বন্ধ করে আন্দোলনে নেমে গেছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও জানিয়েছে সংহতি। আন্দোলন চলছে। আন্দোলন ঠেকাতে শত শত পুলিশ-RAB তাদের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে। এমন ভয়ংকর একটা অবস্থায় আপনি কেন কিছু বলছেন না?
আপনি শিক্ষার্থীদের মন থেকে গণিতের ভয় দূর করেছেন, মুখস্থ করার প্রবণতা দূর করেছেন। কিন্তু পরিমলদের মত শিক্ষকদের যদি দূর করতে না পারেন তাহলে তো কিছুই হবে না। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিমলিয় ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আপনি কেন নিরব ভূমিকা পালন করছেন তা আমার মাথাতেই আসছে না। যে ব্যক্তি বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর জন্য সব কাজ ফেলে সিলেট থেকে ঢাকা চলে আসতে পারেন, সে কিছুতেই তার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের উপর নির্যাতন সহ্য করতে পারেন না। আমি নিশ্চিত আপনি অনেক বড় কোন কাজে ব্যস্ত আছেন। এ জন্যই কিছু বলছেন না। কিছু লিখছেন না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে আপনি কিছু করার জন্য ছটফট করছেন তা আমি খুব ভালো করে জানি।
হয়তো আপনার আশেপাশে অক্টোপাসের মত অনেক বাধা, অনেক সমস্যা। কিন্তু আপনিই আমাদের শিখিয়েছেন ভালো কাজে বাধা আসবেই, কিন্তু সবাই চাইলে সেই বাধা আর বাধা থাকে না। আমরা সবাই চাচ্ছি, এখন আপনি আমাদের সাথে পথে নামলেই সব বাধা দুই মিনিটে উড়ে যাবে।
অতএব, সবিনয় নিবেদন, আপনি অতি দ্রুত কিছু একটা করুন। আপনার প্রিয় শিক্ষার্থীরা খুব বিপদে আছে। দিন দিন এই বিপদ, এই ভয় আরো বাড়ছে। এই ভয়ের কাছে গণিত বা ফিজিক্সের ভয় কিছুই না।
ভয় সবাই পায়, রাশেদও পেয়েছিল। কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও সে বলেনি পাকিস্তান জিন্দাবাদ। দেশের জন্য জীবনটাই দিয়ে দিয়েছিলো ছোট্ট রাশেদ। আপনিই এই গল্প শুনিয়েছেন আমাদের। আর যে এমন সাহসীর গল্প লিথে ফেলতে পারে, তার কাছে যে সকল ভয়ই তুচ্ছ তা আমরা সবাই জানি। এরকম লক্ষ লক্ষ রাশেদ এখনও আছে আমাদের দেশে। প্রত্যেকেই আহবানের দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আপনার দিকে। আপনি কি সেই আহবানে সাড়া দেবেন না?
বিণীত নিবেদক
আপনার একান্ত গুণমুগ্ধ ভক্ত
আদনান মুকিত

মূল লিংকঃ http://on.fb.me/oCCWbZ

সরকার দলীয় প্রভাবশালী মহলের তদবিরে লম্পট শিক্ষক গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার পরিমল জয়ধর ও তার সহযোগীরা ভিকারুননিসা স্কুল এন্ড কলেজে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগ পরীক্ষায় যিনি প্রথম হয়েছিলেন এবং যারা মেধা তালিকায় প্রথমদিকে ছিলেন, তাদের বাদ দিয়ে সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল লোক দেখানো। সদ্য ভেঙে দেয়া প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির সভাপতি ও ওয়ার্কার্স পার্টির
সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি’র সুপারিশে এবং প্রবল বিক্ষোভের মুখে সরে যেতে বাধ্য হওয়া অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমের সরাসরি আশীর্বাদে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। দলীয় প্রভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর এসব শিক্ষক কাউকেই তোয়াক্কা করতো না। তাদের প্রভাবে প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা টুঁ শব্দও করতে পারতেন না। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন ক্যাম্পাসের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযোগ করেছেন, সরকারদলীয় প্রভাবের কারণে এসব লম্পট শিক্ষক বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তারা শিক্ষিকাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেই ক্ষান্ত হতো না; ছাত্রীদের ইভটিজিং পর্যন্ত করতো। শেষেতো ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করতেও তারা ভয় পেত না। তারা বলেন, লম্পট পরিমল ও তার সহযোগীরা কতজনের যে সর্বনাশ করেছে কে জানে। অনেকে হয়তো মানসম্মানের ভয়ে মুখ খোলেননি।
প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ভিকারুননিসা স্কুলের কোনো শাখায়ই ২ জনের বেশি পুরুষ শিক্ষক থাকে না। কিন্তু শেখ হাসিনার বান্ধবী পরিচয়ধারী অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগম দায়িত্ব নেয়ার পর ৬ জন পুরুষ শিক্ষক বিশেষ সখ্য ও দলীয় পরিচয়ে নিয়োগ দেন। এরা হলেন—পরিমল জয়ধর, বরুণচন্দ্র বর্মণ, বাবুল কর্মকার, প্রণব ঘোষ, বিশ্বজিত্ ও বিষ্ণু চন্দ্র। এ ৬ শিক্ষককেই নিয়োগ দেয়া হয় বসুন্ধরা শাখায়। এদের মধ্যে শিক্ষক বিশ্বজিত্ ছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ ও সম্পর্কের অভিযোগ ওঠে।
সম্প্রতি এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় ভিকারুননিসা স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানে টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ওঠে। পরে নরপশু শিক্ষক পরিমল জয়ধরকে স্কুল থেকে বরখাস্ত এবং তার সহযোগী লম্পট শিক্ষক বরুণচন্দ্র বর্মণ ও আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অন্যদের বিভিন্ন শাখায় বদলি করা হবে বলে জানানো হয়। এছাড়া বসুন্ধরা শাখার ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক লুত্ফর রহমানকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তার পদ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। গত ৫ জুলাই ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সিদ্ধেশ্বরী মূল শাখায় গভর্নিংবডি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি মামলা করেন। পরিমলকে কেরানীগঞ্জে তার বড় বোনের বাসা থেকে ৭ জুলাই ভোররাতে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে অন্য এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে পরিমলকে রাজধানীর উত্তরা মডেল স্কুল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়ার লাটেংগা গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতার নাম ক্ষিতিশ জয়ধর। শিক্ষিকারা জানান, বসুন্ধরা শাখার শিক্ষিকারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল হোসনে আরা বেগমের কাছে এসব শিক্ষকের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেন। এতে প্রিন্সিপাল শিক্ষিকাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তাদের তিনি শাসিয়ে বলেন, আপনারা এতো কনজারভেটিভ কেন? পরে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক পরিমল জয়ধর ও বরুণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে ক্রমান্বয়ে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণ ও সম্পর্কের অভিযোগ বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রিন্সিপাল তাদের সতর্ক না করে উল্টো তাদের মদত দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে পরিমল জয়ধর দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে একাধিকবার জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করলে ওই ছাত্রী শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে সম্প্রতি অভিভাবকের মাধ্যমে কলেজ প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ জানায়। অভিযোগে শারীরিক সম্পর্কের সেই দৃশ্য ইন্টারনেটে প্রচার করার হুমকি প্রদানের লিখিত অভিযোগও আনা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, যৌন নিপীড়নের শিকার ছাত্রী লিখিত অভিযোগ করলেও এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল বলেন, ‘মেয়েটি ভালো নয়, পরিমল ভালো’। শিক্ষিকারা জানান, প্রিন্সিপালই ভালো নয়। নির্মম পরিস্থিতির শিকার একটি মেয়েকে তিনি কিভাবে খারাপ বলেন? শিক্ষিকারা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির কাছে পুরুষ শিক্ষক পরিমলসহ অন্যান্য লম্পট শিক্ষকের বিচার ও একই সঙ্গে তারা হোসনে আরার অপসারণও দাবি করেন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে ধর্ষক পরিমলের প্রশ্রয়দাতা অধ্যক্ষ হোসনে আরাকে অবশেষে বৃহস্পতিবার সরাতে বাধ্য হয় সরকার। উত্তাল ভিকারুননিসার পরিস্থিতি শান্ত করতে মঞ্জুআরা বেগমকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের দায়িত্ব (চলতি) দেয়া হয়। আগের গভর্নিংবডি ভেঙে দিয়ে চার সদস্যের এডহক কমিটি গঠন করা হয়। গত বুধবার রাতে ভিকারুননিসার পরিস্থিতি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুন আমার দেশকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বৃহস্পতিবার মঞ্জুআরা বেগমকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব (চলতি) দেয়া হয়েছে। এর আগের দিন (বুধবার) অধ্যক্ষ আম্বিয়া খাতুনকে দায়িত্বে বসানো হলেও তা নিয়মতান্ত্রিক ছিল না। এদিকে অধ্যক্ষ হোসনে আরা তিন মাসের ছুটিতে গেছেন। আমরা তার ছুটি মঞ্জুর করেছি। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মঞ্জুআরা বেগম। প্রয়োজনে এডহক কমিটি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেবেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আমার দেশকে বলেন, আমি সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা বোর্ড ভিকারুননিসার গভর্নিংবডি ভেঙে দিয়ে নতুন এডহক কমিটি করেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সেন্টিমেন্ট বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা বোর্ড ভিকারুননিসায় ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়েছে মঞ্জুআরা বেগমকে। তিনি আরও জানান, ভিকারুননিসায় পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে এডহক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এ কমিটি ৬ মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন করবে এবং বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে পদক্ষেপ নেবে। প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থ ও শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মতামত বিবেচনা করেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যাবেন তারা।
এদিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের নতুন গভর্নিংবডির আহ্বায়ক ও ঢাকার জেলা প্রশাসক মহিবুল হক গতকাল পূর্ণাঙ্গ (চার সদস্যবিশিষ্ট) এডহক (আহবায়ক) কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যসচিব হলেন নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুআরা বেগম। অন্য দু’জন সদস্যের মধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি হলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোশাররফ হোসেন এবং শিক্ষক প্রতিনিধি গণিত বিভাগের শিক্ষক নাসরীন আক্তার।
প্রসঙ্গত, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে বেশ কিছুদিন ধরেই টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আন্দোলনের মুখে বুধবার সকালে গভর্নিংবডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ষক শিক্ষক পরিমলের প্রশ্রয়দাতা প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা আম্বিয়া খাতুনকে গত বুধবার প্রতিষ্ঠানটির নতুন অধ্যক্ষ মনোনীত করা হয়। কিন্তু বিকেলে সেই গভর্নিংবডি বাতিল করে ঢাকা জেলা প্রশাসক মহিবুল হকের নেতৃত্বে ৪ সদসস্যের একটি এডহক কমিটি গঠন করে সরকার। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির দুটি অংশের বিরোধের কারণে কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডির ৫ সদস্যের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ হোসনে আরা বেগমকে অপসারণ ও নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আম্বিয়া খাতুনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। গভর্নিংবডির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হননি গভর্নিংবডির সভাপতিসহ অপর ৪ সদস্য। তারা সবাই সরকার দলীয়। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার দ্রুত সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। অপরদিকে এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে অভিযোগ পাবার পরও এর সুরাহা না করে গত ৭ জুলাই আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে লম্ব্বা সফরে চলে যান শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির প্রধান বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি ব্যক্তিগত কাজে নিউইয়র্ক অবস্থান শেষে আগামী ২১ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেবেন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তিনি ঢাকায় ফিরবেন বলে জানা গেছে। এদিকে গত সোমবার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের লম্পট শিক্ষক পরিমল জয়ধর ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের কথা স্বীকার করে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার একদিন আগেই তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) এসএম শাহাদত হোসেন তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন জানান। জবানবন্দিতে পরিমল ঘটনা কথা স্বীকার করে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের দাবি : গতকাল গ্রেফতারকৃত শিক্ষক পরিমল জয়ধরসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও অভিযোগ সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে সংহতি মঞ্চ। পাশাপাশি ভিকারুননিসা নূনের শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবির প্রতিও সমর্থন জানানো হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুুল অ্যান্ড কলেজের জন্য সংহতি মঞ্চ’ আয়োজিত বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এ ঘোষণা দেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেকে উপলব্ধি হয়েছে, এখন সময় এসেছে নীরবতা ভেঙে, লজ্জা ও অপমানের যন্ত্রণাকে লড়াইয়ের শক্তিতে পরিণত করার। অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ছাত্রীদের এই আন্দোলকে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে নিয়ে যেতে হবে। মূলত এ আন্দোলন হচ্ছে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। কারণ ছাত্রীরা আজ পুঁজিবাদের শিকার। তবে আশার কথা হচ্ছে মেয়েরা প্রতিবাদ করতে শিখেছে।
সমাবেশে সংহতি মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নুরুল কবির, নূর মোহাম্মদ, ফয়েজুল হাকিম লালা, নাসিমা আখতার, মোশরেফা মিশু, জুনায়েদ সাকি প্রমুখ। ভিকারুননিসায় পরিমলের মতো ঘটনা দেশের সর্বত্রই ঘটছে। কিন্তু এখানকার সাহসী শিক্ষার্থীরা এবং তাদের অভিভাবকরা সেই পুরনো সংস্কৃতি ভেঙে সংগ্রামের নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। এই ইতিহাসকে কাজে লাগিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন বক্তারা।

রিয়াজ চৌধুরী
মূল লিংকঃ http://www.amardeshonline.com/pages/details/2011/07/16/93280